চার ঘন্টা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন হাসপাতাল, দায় নেবে কে?
ডেস্ক রিপোর্ট
আপলোড সময় :
২৪-০৬-২০২৫ ০৬:৩৩:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৪-০৬-২০২৫ ০৬:৩৩:৫০ অপরাহ্ন
ছবি: সংগৃহীত
বকেয়া বিল না পেয়ে হাসপাতালের সংযোগ কেটে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বহু রোগী বঞ্চিত হন প্রত্যাশিত সেবা থেকে। সবচেয়ে বেশি ভুগতে হয় শ্বাসকষ্টের রোগীদের। নেবুলাইজার পেতে হাসপাতালে ছোটাছুটি শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় নার্সরাও ছিলেন অসহায়।
ঘটনা কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। জানা গেছে, হাসপাতালের কাছে আবাসিক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের ৪১ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে। বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও পরিশোধ না করায় মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল ৯টার দিকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। বন্ধ হয়ে যায় হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম।
পরে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বিল পরিশোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পর বিদ্যুৎ বিভাগ বেলা ১টার দিকে সংযোগ ফিরিয়ে দেয়।
কিন্তু প্রায় ৪ ঘণ্টা হাসপাতালটি বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন থাকায় অপরিসীম ভোগান্তি পোহাতে হয় রোগীদের। এমনই একজন কুলিয়ারচর উপজেলার অহিদুল্লাহ মিয়া (৬৫)। তাঁকে দিনে একাধিকবার নেবুলাইজার নিতে হয়। সকাল থেকে তাঁর সমস্যা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই নেবুলাইজার পেতে তিনি বারবার নার্সদের তাগিদ দিচ্ছিলেন। কিন্তু নার্সরাও ছিলেন অসহায়।
অহিদুল্লাহ বলেন, ‘শ্বাস নিতে পারতেছিলাম না। মনে হইছিল, অহনই দম বাইর হইয়া যাইব। আর কিছুক্ষণ দেরি হইলে কী হইত, আল্লাহ জানে।’
পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শ্বাসকষ্টের রোগী হানিফ মিয়া বলেন, ‘এই গরমে ফ্যান ছাড়া থাকা যায়? ঘামে বিছানা ভিজা গেছে। ভাবতেছিলাম, বাড়িতে চইল্লা যামু।’ পাশের শয্যার রোগী আলতু আলী বলেন, ‘কারেন্ট না থাকায় আরও বেশি অসুস্থ হইয়া গেছি।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি কাগজে-কলমে ১০০ শয্যার হলেও সরকারি সুবিধা মেলে ৫০ শয্যার মতো। তাতে রোগীর চাপ বেশি, আবার বিদ্যুৎ খরচও তুলনামূলক বেশি। এর ওপর যোগ হয়েছে ২০ শয্যার একটি ট্রমা সেন্টার, যার কার্যক্রম না থাকলেও বিদ্যুৎ ব্যবহার চলছে। ৪১ লাখ টাকার বকেয়ার মধ্যে ২৩ লাখ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের, আর ১৮ লাখ ট্রমা সেন্টারের। ট্রমা সেন্টারের জন্য আলাদা বাজেট না থাকায় এই বিলও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকেই পরিশোধ করতে হয়। এর আগে দুই দফায় ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়নি। তবে মৌখিকভাবে আগেই জানানো হয়েছিল। লিখিতভাবে জানালে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া যেত। বেলা ১টার দিকে বিদ্যুৎ–সংযোগ পুনরায় স্থাপন করা হয়।
ভৈরব আবাসিক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, দিন দিন বকেয়া বাড়ছিল। অনেকবার বলার পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিল পরিশোধ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, হাসপাতাল বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকায় রোগীদের যে ভোগান্তি পোহাতে হলো, এর দায় নেবে কে? কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা যদি ঘটত, তার দায়ই বা কে নিত? সূত্র : প্রথম আলো
বাংলা স্কুপ/ডেস্ক/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স